পদার্থবিজ্ঞান (নবম-দশম)
৩য় অধ্যায়ঃ বল
এসএসসি পদার্থবিজ্ঞান ৩য় অধ্যায় বল- এর সম্পূর্ণ নোট পিডিএফ সহ আপলোড করা হয়েছে।
পদার্থবিজ্ঞানের মৌলিক বিষয়গুলোর একটি হলো এই 'বল'। পরীক্ষায় এই অধ্যায় থেকে প্রশ্ন আসবেই।
তাই একটি ভালো প্রস্তুতি থাকলে উত্তর দেয়া খুবই সহজ হবে।
নিচে এই অধ্যায়ের বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
বলঃ যা কোন বস্তুর গতি পরিবর্তন ঘটায়, তাকে বল বলে।
🔸গতিশীল বস্তু কে স্থিতিশীল করে🔹স্থির বস্তু কে গতিশীল করে
বলের সমীকরণ
কোন বস্তুর গতির পরিবর্তন মানে ঐ বস্তুর ত্বরণের পরিবর্তন এবং বস্তুর যেহেতু ভর বিদ্যমান সুতরাং বলা যায়, বল হলো বস্তুর ভর ও ত্বরণের গুণফল।
F = ma
এখানে,
F = বল (Force)
m = বস্তুর ভর (mass)
a = ত্বরণ (acceleration)
বলের একক ও মাত্রা
- বলের এককঃ F = ma
= kgms-2
= N (নিউটন)
সুতরাং, বলের একক হলো নিউটন।
- বলের মাত্রাঃ F = ma
F = M x LT-2
[যেহেতু, ত্বরণের মাত্রা LT-2]
সুতরাং, বলের মাত্রা [F] = [MLT-2]
বলের প্রকারভেদ
মৌলিক বল চার প্রকার।
- মহাকর্ষ বল
- তড়িৎ চুম্বকীয় বল
- দুর্বল নিউক্লিয় বল
- সবল নিউক্লিয় বল
- মহাকর্ষীয় বলঃ মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুই একে অপরকে আকর্ষণ করে একে মহাকর্ষীয় বল বলে।
- তড়িৎ চুম্বকীয় বলঃ
দুটি চার্জিত বা আহিত বস্তুর বল হল তড়িৎ বল। দুটি চুম্বকের মধ্যে ক্রিয়াশীল বল হলো চৌম্বক বল।
তড়িৎ বল ও চুম্বক বলের সংযুক্ত অবস্থায় যে বল ক্রিয়া করে, তাকে তড়িৎ চৌম্বকীয় বল বলে।
- সবল নিউক্লিয় বলঃ পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ভেতরে প্রোটন ও নিউট্রন গুলোর প্রবল আকর্ষণ বলকে সবল নিউক্লিয় বল বলে।
এটি সবচেয়ে শক্তিশালী বল। - দুর্বল নিউক্লিয় বলঃ পরমাণুর অস্থায়ী নিউক্লিয়াসগুলোতে (তেজস্ক্রিয় নিউক্লিয়াস) বিটা কণা ক্ষয়ের জন্য এই বল উৎপন্ন হয়।
বলের শক্তিক্রম
মহাকর্ষ বল < দুর্বল নিউক্লিয় বল < তড়িৎ চুম্বকীয় বল < সবল নিউক্লিয় বল
ভরবেগ (Momentum)
কোন গতিশীল বস্তুর ভর ও তার বেগের গুনফলকে ঐ বস্তুর ভরবেগ বলে।
ভরবেগ, P = mv
ভরবেগ ও শক্তির নিত্যতা
একটি বস্তুর যতটুকু ভরবেগ হারায়, অপর বস্তু ঠিক সমপরিমাণ ভরবেগ লাভ করে। অর্থাৎ সংঘর্ষের পরে ও আগে ভরবেগ একই থাকে।
সংঘর্ষের আগে ভরবেগ,
১ম বস্তুর আদি ভরবেগ = m1u1
২য় বস্তুর আদি ভরবেগ = m2u2
সংঘর্ষের পরে ভরবেগ,
প্রথম বস্তুর শেষ ভরবেগ = m2v2
দ্বিতীয় বস্তুর শেষ ভরবেগ = m2v2
সুতরাং ভরবেগের নিত্যতা সমীকরণটি হবে,
m1u1 + m2u2 = m1v1 + m2v2নিউটনের ১ম সূত্র
"বাহ্যিক বল প্রয়োগ না করলে স্থির বস্তু স্থির থাকবে, সমবেগে গতিশীল বস্তু চিরকাল গতিশীল থাকবে।"
একে জড়তার সূত্র বলা হয়।
জড়তাঃ কোন বস্তু যে অবস্থায় আছে, সেই অবস্থায় থাকার প্রবণতা হলো জড়তা।
জড়তা দুই প্রকার।
- স্থিতিজড়তাঃ স্থির বস্তু চিরকাল স্থির থাকার প্রবণতা হলো স্থিতি জড়তা।
- গতিজড়তাঃ গতিশীল বস্তু চিরকাল গতিশীল থাকার প্রবণতা হলো গতিজড়তা।
"এই মহাবিশ্বে পরম স্থিতিশীল বা পরম গতিশীল কোন বস্তু নেই।"
নিউটনের ২য় সূত্র
"বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার তার ওপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যে দিকে ক্রিয়া করে বস্তুর ভরবেগও সেই দিকে ক্রিয়া করে। "
বস্তুর আদি ভরবেগ = mu
বস্তুর শেষ ভরবেগ = mv হলে,
ভরবেগের পরিবর্তন = mv - mu
সুতরাং, ভরবেগের পরিবর্তনের হার (সময়ের সাপেক্ষে),
= (mv - mu) / t
= m (v-u) / t
= ma [যেহেতু, ত্বরণ a = (v-u)/t ]
অর্থাৎ , P/t ∝ ma
সুতরাং বলা যায়, বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার বস্তুর উপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক।
মহাকর্ষ বল
![]() |
চিত্রঃ মহাকর্ষ বলের সূত্র |
এটি নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র। এখানে G হলো একটি সমানুপাতিক ধ্রুবক। G এর মান 6.673x10-11 Nm2kg-2
মহাকর্ষ সূত্র হতে অভিকর্ষজ ত্বরণ নির্ণয়
মহাকর্ষ বলতে আমরা জানি মহাবিশ্বের যেকোন দুটি বস্তুর আকর্ষণ।
আর অভিকর্ষ হলো ওই দুটি বস্তুর মধ্যে একটি যদি পৃথিবী হয় এবং অপর বস্তু হবে পৃথিবীতে থাকা যেকোনো বস্তুর মধ্যে আকর্ষণ।
এখানে,
M = পৃথিবীর ভর
m = বস্তুর ভর
R = পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে পৃষ্ঠে থাকা বস্তুর দূরত্ব
G = মহাকর্ষীয় ধ্রুবক
g = অভিকর্ষীয় ত্বরণ
নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র হতে অভিকর্ষীয় ত্বরণ নির্ণয়ের রাশিমালা নিচে দেয়া হলো।
![]() |
চিত্রঃ মহাকর্ষ সূত্র হতে অভিকর্ষীয় সুত্র প্রতিপাদন |
অভিকর্ষজ ত্বরণের সূত্র হতে আমরা পাই, কোন বস্তুর ভরের উপর অভিকর্ষীয় ত্বরণ নির্ভর করে না। বরং পৃথিবীর ভর ও কেন্দ্র থেকে বস্তুর দূরত্বের উপর এটি নির্ভর করে।
ভূপৃষ্ঠ থেকে h উচ্চতায় অভিকর্ষজ ত্বরণ
মনে করি, একটি বস্তু পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে h উচ্চতায় অবস্থান করছে।
ঐ অবস্থানে বস্তুটির উপর ক্রিয়াশীল অভিকর্ষীয় ত্বরণের রাশিমালা নিচে দেয়া হলো।
![]() |
চিত্রঃ নির্দিষ্ট উচ্চতায় অভিকর্ষ ত্বরণ |
নিউটনের ৩য় সূত্র
"প্রতিটি ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া বল রয়েছে।"
F1 = -F2
এখানে,
F1 = ক্রিয়াশীল বল
F2 = প্রতিক্রিয়াশীল বল
ঋণাত্মক " - " চিহ্ন দ্বারা বিপরীতমুখী বল বোঝায়।
"প্রকৃতিতে একক বলের কোনো অস্তিত্ব নেই"
একটি বল ক্রিয়াশীল হলে সেখানে প্রতিক্রিয়া বল অবশ্যই থাকবে।
ঘর্ষণ বল
"যখন একটি বস্তু অপর একটি বস্তুর সংস্পর্শে চলে বা চলার চেষ্টা করে, তখন বস্তুদ্বয়ের স্পর্শতলে গতির বিপরীতে যে বাধার সৃষ্টি হয় তাকে ঘর্ষণ বলে।"
এখানে গতির বিরুদ্ধে বাধাদানকারী বলকে ঘর্ষণ বল বলে।
ঘর্ষণ বলের প্রকারভেদ
ঘর্ষণ বল চার প্রকার।
- স্থিতি ঘর্ষণঃ দুটি তল পরস্পর সংযুক্ত থাকা অবস্থায় যখন একটি তল গতিশীল হওয়ার চেষ্টা করেও অপর তলের বাধাদানকারী ঘর্ষণ বলের বিরুদ্ধে গতিশীল হতে পারে না, তাকে স্থিতি ঘর্ষণ বলে।
- গতীয় ঘর্ষণঃ দুটি স্পর্শ তলের মধ্যে যে আপেক্ষিক বল থাকে, তখন এদের মধ্যে ক্রিয়াশীল ঘর্ষণ বল কে গতীয় ঘর্ষণ বলে।
- আবর্ত ঘর্ষণঃ কোন বস্তুর একটি তলের সংস্পর্শে থেকে যখন ঐ তলের সাপেক্ষে আবর্ত গতিতে (চক্রাকারে) গতিশীল হয়, তখন তলটি বস্তুটির গতির বিরুদ্ধে যে ঘর্ষণ বল প্রদান করে, তাকে আবর্ত ঘর্ষণ বলে।
- প্রবাহী ঘর্ষণঃ প্রবাহী পদার্থের (তরল, বায়ু) মধ্য দিয়ে কোন বস্তু গতিশীল হলে যে ঘর্ষণ বল তৈরি হয়, তাকে প্রবাহী ঘর্ষণ বলে।
গতির উপর ঘর্ষণের প্রভাব
ঘর্ষণ হলো একটি বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়াশীল বল। এটি সবসময় গতির বিপরীত দিকে কাজ করে।
ঘর্ষণ বাড়িয়ে বা কমিয়ে গতিকে নিয়ন্ত্রন করা যায়।
নিচে ঘর্ষণ বাড়ানো বা কমানোর কিছু উপায় বর্ণনা করা হলো।
- ঘর্ষণ বাড়াতে
- পৃষ্ঠ খসখসে করা
- প্রবাহীর ঘনত্ব বাড়ানো
- চাকা বা বল বিয়ারিং সরানো
- স্পর্শতলে বল প্রয়োগ করা
- ঘর্ষণ কমাতে
- পৃষ্ঠা মসৃণ করা
- স্পর্শতলে পিচ্ছিল পদার্থ ব্যবহার করা (লুব্রিক্যান্ট, গ্রিজ ইত্যাদি)
- নকশার সুষ্ঠু ডিজাইন
- স্পর্শ তলদ্বয়ের দূরত্ব বাড়ানো
- স্পর্শতল থেকে বল অপসারণ করা
পিডিএফ ডাউনলোড
PDF
SSC Physics Ch 3
Size: 3.9MB
এই অধ্যায়ের মোটামুটি আলোচনা এতটুকুই। মেইন বই ভালোভাবে পড়ার সাজেশন থাকবে।
তবে বর্তমান পদার্থবিজ্ঞান বইতে বিষয়গুলো অতটা ভালোভাবে দেয়া নেই। সবচেয়ে ভালো হয় যদি '১৮ সালের বই যোগাড় করে পড়তে পারো।
নোটগুলো বন্ধুদের সাথেও শেয়ার করো। কমেন্টে আমাকে জানাতে পারো তোমার মতামত।
ধন্যবাদ।