রসায়ন (নবম-দশম)
৭ম অধ্যায়ঃ রাসায়নিক বিক্রিয়া
পদার্থের পরিবর্তন
- ভৌত পরিবর্তনঃ পদার্থের অভ্যন্তরীণ গঠনের পরিবর্তন না হয়ে শুধু বাহ্যিক পরিবর্তন ঘটে।
পানির তিন অবস্থা- বরফ, তরল, বাষ্প তিনটি কিন্তু পানির উপাদান H2O দিয়ে গঠিত। শুধুমাত্র বাহ্যিক পরিবর্তন ঘটেছে।
- রাসায়নিক পরিবর্তনঃ পদার্থের অভ্যন্তরীণ যে সকল পরিবর্তনের জন্য সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী নতুন কোন পদার্থ সৃষ্টি হয়, তাকে পদার্থের রাসায়নিক পরিবর্তন বলে।
যেমন- মোম(কঠিন)। একে পোড়ালে অভ্যন্তরীণ অনুর পরিবর্তন ঘটে তরলে পরিণত হয়। অর্থাৎ এক্ষেত্রে মোমের ভেতরে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটেছে।
রাসায়নিক বিক্রিয়া
একই কিংবা ভিন্ন দুটি পদার্থ পরস্পরের সংস্পর্শে আসলে যে বৈশিষ্ট্যের জন্য এদের মধ্যে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে নতুন কোন পদার্থ সৃষ্টি হয়, তাকে রাসায়নিক বিক্রিয়া বলে।
রাসায়নিক বিক্রিয়ার শ্রেণীবিভাগ
➤দিকের ওপর ভিত্তি করে
- একমুখী বিক্রিয়াঃ কোন রাসায়নিক বিক্রিয়ার বিক্রিয়ক গুলো যখন উৎপাদে পরিণত হয়, তাকে একমুখী বিক্রিয়া বলে। এই বিক্রিয়া সর্বদা সামনের দিকে গতিশীল।
![]() |
একমুখী বিক্রিয়ার চিত্র |
- উভমুখী বিক্রিয়াঃ যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ক গুলো উৎপাদে পরিণত হয়; আবার উৎপাদ গুলোও বিক্রিয়কে পরিণত হয়, তাকে উভমুখী বিক্রিয়া বলে।
এই প্রক্রিয়াটি নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে হয়। এর দিক সম্মুখমুখী অথবা পশ্চাৎমুখী হয়।
![]() |
উভমুখী বিক্রিয়ার চিত্র |
➤বিক্রিয়ায় তাপের পরিবর্তনের উপর ভিত্তি করে
- তাপোৎপাদী বিক্রিয়াঃ যে রাসায়নিক বিক্রিয়া তাপ উৎপন্ন হয়, তাকে তাপোৎপাদী বিক্রিয়া বলে।
সূত্রঃ A + B ⇄ C + D + ΔH [ΔH=তাপশক্তি (জুল)]
![]() |
তাপোৎপাদী বিক্রিয়ার চিত্র |
- তাপহারী বিক্রিয়াঃ যে বিক্রিয়ায় তাপশক্তির শোষণ ঘটে থাকে, তাকে তাপহারী বিক্রিয়া বলে।
এই ক্ষেত্রে বাইরের পরিবেশ থেকে বিক্রিয়ায় তাপ শোষিত হয়।
সূত্রঃ A + B ⇄ C + D + ΔH
![]() |
তাপহারী বিক্রিয়ার চিত্র |
HSC রসায়ন ১ম পত্র কোর্স
- সপ্তাহে ২টি করে Live Class
- Doubt-Solving Teacher
- অধ্যায়-ভিত্তিক Lecture Sheet
- Extra Class Support
- নিয়মিত উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের জন্য Special Gift!
চিহ্নের তাৎপর্য
- তাপোৎপাদী বিক্রিয়া- ΔH ঋণাত্মক
- তাপহারী বিক্রিয়ায়- ΔH ধনাত্মক
➤ইলেকট্রন স্থানান্তরের উপর ভিত্তি করে
- ক) জারন-বিজারন বিক্রিয়া (Redox): Reduction (বিজারন) ও Oxidation (জারন) এর পূর্ণরূপ Redox বা জারন-বিজারন।
যে বিক্রিয়ায় ইলেকট্রনের আধান-প্রদান ঘটে, তাকে জারন বিজারন বিক্রিয়া বলে।
- জারন বিক্রিয়া (Oxidation): যে বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ক ইলেকট্রন ত্যাগ করে, তাকে জারন বিক্রিয়া বলে।
এই বিক্রিয়ককে বিজারক বলে।
![]() |
জারন বিক্রিয়ার চিত্র |
- বিজারণ বিক্রিয়া (Reduction): যে বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ক ইলেকট্রন গ্রহণ করে, তাকে বিজারণ বিক্রিয়া বলে।
এই বিক্রিয়ককে বলা হয় জারক বলা হয়।
![]() |
বিজারন বিক্রিয়ার চিত্র |
জারণ সংখ্যা
কোন মৌলের পরমাণুর মোট ধনাত্মক বা ঋণাত্মক চার্জের সংখ্যাকে জারণ সংখ্যা বলা হয়।
ইলেকট্রন আদান-প্রদানের সময় এই আধান বা চার্জ পরিবর্তিত হয়ে থাকে।
- Fe2+ এর জারণ সংখ্যা +2
- Cl- এর জারন সংখ্যা -1
- Cl2 (অনু) এর জারন সংখ্যা 0
e- ত্যাগ করলে ধনাত্মক জারণ সংখ্যা
e- গ্রহণ করলে ঋণাত্মক জারণ সংখ্যা
জারণ সংখ্যা নির্ণয়
- যৌগে অবস্থিত কাঙ্ক্ষিত পরমাণুর জারণ মান 'X' ধরতে হবে।
- যৌগের অন্যসকল অণু/পরমাণুর জারণ মানকে প্রাপ্ত অনু/পরমাণুর সংখ্যা দ্বারা গুণ করে নিতে হবে।
- যৌগের জারণ সংখ্যার সমষ্টি শূন্য হয়। এখান থেকে X এর মান বের করলেই কাঙ্খিত জারণ মান পাওয়া যাবে।
যেমন-
KClO3 তে Cl এর জারন মান নির্ণয়:
এখানে,
K এর জারন মান +1 (আছে 1 টি)
O এর জারন মান -2 (আছে 3 টি)
মোট জারন সংখ্যার সমষ্টি 0 হলে-
সুতরাং, Cl এর জারন মান হবে,
1 + X + (-2 x 3) = 0
1+ X - 6 = 0
x = 5
সুতরাং, Cl এর জারন মান +5
জারণ-বিজারণ বিক্রিয়ার মিথস্ক্রিয়া
- জারন বিক্রিয়ায়ঃ বিজারক ইলেকট্রন ত্যাগ করে জারিত হয়। এখানে জারণ অর্ধ বিক্রিয়া ঘটে
- বিজারন বিক্রিয়ায়ঃ জারক ইলেকট্রন গ্রহণ করে বিজারিত হয়। এখানে বিজারন অর্ধ বিক্রিয়া ঘটে।
জারণ-বিজারণ বিক্রিয়ার প্রকারভেদ
- সংযোজন বিক্রিয়াঃ যে জারন-বিজারন বিক্রিয়ায় একাধিক বিক্রিয়ক বিক্রিয়া করে একটি উৎপাদ গঠন করে, তাকে সংযোজন বিক্রিয়া বলে।
N2 + 3H2 → 2NH3 (অ্যামোনিয়া)
C + O2 → CO2
- বিয়োজন বিক্রিয়াঃ যে বিক্রিয়ায় একটি যৌগ ভেঙ্গে একাধিক মৌল বা যৌগ তৈরি হয় তাকে বিয়োজন বিক্রিয়া বলে।
2H2O →[তড়িৎ বিশ্লেষণ]→ H2 + O2
- প্রতিস্থাপন বিক্রিয়াঃ সক্রিয় মৌল বা যৌগমূলক কর্তৃক দুর্বল মৌল বা যৌগ প্রতিস্থাপিত হয়ে নতুন উৎপাদ বা যৌগ গঠন করাকে প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া বলে।
Zn + H2SO4 → ZnSO4 + H2
[Zn2+ H2+,SO42- → Zn2+,SO42- H2+]
- দহন বিক্রিয়াঃ কোন মৌল বা যৌগকে বাতাসের অক্সিজেনের(O2) উপস্থিতিতে পুড়িয়ে মৌল বা যৌগের অক্সাইডে পরিণত করার প্রক্রিয়াকে দহন বিক্রিয়া বলে।
CH4 + O2 → CO2 + 2H2O + তাপ
এ প্রক্রিয়ার সবসময় তাপ উৎপন্ন হয়।
ইলেকট্রন আদান-প্রদানের ভিত্তিতে-
খ) Non-Redox বিক্রিয়াঃ যে সকল বিক্রয় ইলেকট্রনের আদান-প্রদান ঘটেনা তাদেরকে নন-রেডক্স বিক্রিয়া বলে।এরা দুই প্রকার।
- প্রশমন বিক্রিয়াঃ এসিড-ক্ষারের বিক্রিয়ায় একটি নিরপেক্ষ যৌগ তৈরি হলে, তাকে প্রশমন বিক্রিয়া বলে।
HCl (তীব্র এসিড) + NaOH (তীব্র ক্ষার) → NaCl (লবন) + H2O + ΔH [ΔH = -57.34 kJ]
জ্বলীয় দ্রবণে এসিড H+ ও ক্ষার OH- দান করেচিত্রঃ প্রশমন বিক্রিয়া
দর্শক আয়নঃ যেসব আয়ন বিক্রিয়ায় অংশ নেয় না, তাদেরকে দর্শক আয়ন বলা হয়।
এখানে Na+ ও Cl- হলো দর্শক আয়ন। এরা নিজেরা ইলেকট্রন বিনিময় করে আলাদা একটি যৌগ NaCl (লবন) তৈরি করে।
সুতরাং, উপরের বিক্রিয়াটির প্রকৃত সমীকরণ হলো-
H+ + OH- → H2O + ΔH
[ΔH = -57.34 kJ]প্রশমন বিক্রিয়ায় সব সময় তাপ উৎপন্ন হয়।
- অধঃক্ষেপণ বিক্রিয়াঃ যে বিক্রিয়ায় উৎপন্ন উৎপাদ অদ্রবণীয় বা কম পরিমানে দ্রবণীয় হয় এবং এগুলো কঠিন আকারে পাত্রের তলানীতে জমা হয়, ওই বিক্রিয়াকে অধঃক্ষেপণ বিক্রিয়া বলে।
NaCl + AgNO3 → AgCl (কঠিন) + NaNO3
কিছু বিশেষ ধরণের রাসায়নিক বিক্রিয়া
- পানিযোজন (Hydration): আয়নিক যৌগ গুলোর স্ফটিক গঠনকালে এরা এক বা একাধিক পানির অনুর সাথে যুক্ত হয়ে বিক্রিয়া করে। একে পানিযোজন বিক্রিয়া বলে।
কেলাস পানিঃ আয়নিক যৌগ গুলো যে সংখ্যক পানির অনুর সাথে যুক্ত হয়, তাদেরকে কেলাস কাকে বলে।
পানিযোজনের সূত্রঃ
A + x•H2O → A•xH2O
এখানে, A= যৌগ, x= পানির অনুসংখ্যাচিত্রঃ পানিযোজন
বিক্রিয়ার হার বা বিক্রিয়ার গতিবেগ
বিক্রিয়ার গতিবেগ ∝ বিক্রিয়ার হার
- বিক্রিয়ার গতিবেগ বেশি হলে বিক্রিয়ার হার বেশি হবে।
- বিক্রিয়ার গতিবেগ কম হলে বিক্রিয়ার হার কম হবে।
লা-শাতেলিয়ারের নীতি
![]() |
চিত্রঃ বিক্রিয়ার সাম্যাবস্থার উদাহরণ |
উভমুখী বিক্রিয়া গ্রাফ
![]() |
চিত্রঃ উভমুখী বিক্রিয়ার গ্রাফ |
সম্মুখমুখীঃ বিক্রিয়ক কমে, উৎপাদ বাড়েপশ্চাদমুখীঃ বিক্রিয়ক বাড়ে, উৎপাদ কমে
সাম্যবস্থার উপর তাপের প্রভাব
[ΔH = -92 kJ]
- তাপমাত্রা বাড়ালে:
- সাম্যাবস্থান পশ্চাৎমুখী হবে
- উৎপাদ কমে যাবে
- বিক্রিয়ক বেড়ে যাবে
- তাপমাত্রা কমালে:
- সাম্যাবস্থান সম্মুখমুখী হবে
- উৎপাদ বেড়ে যাবে
- বিক্রিয়ক কমে যাবে
[ΔH = +92 kJ]
- তাপমাত্রা বাড়ালে:
- সাম্যাবস্থান সম্মুখমুখী হবে
- উৎপাদ বেড়ে যাবে
- বিক্রিয়ক কমে যাবে
সাম্যবস্থার উপর চাপের প্রভাব
- উৎপাদের মৌল সংখ্যা বাড়ালে:
- চাপ বাড়বে
- আয়তন হ্রাস পাবে
- সাম্যবস্থার পশ্চাৎমুখী হবে
- উৎপাদন হ্রাস পাবে
- উৎপাদের মৌলের সংখ্যা কমালে:
- চাপ কমবে
- ওজন বৃদ্ধি পাবে
- সাম্যাবস্থান সম্মুখমুখী হবে
- উৎপাদ বৃদ্ধি পেয়ে উৎপাদন বেড়ে যাবে
সাম্যবস্থার উপর ঘনমাত্রার প্রভাব
- বিক্রিয়ক বাড়লে:
- ঘনমাত্রা বেড়ে যাবে (উৎপাদের)
- সাম্যবস্থার সম্মুখমুখী হবে
- উৎপাদ বেড়ে গিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করবে
- উৎপাদ বাড়ালে:
- সাম্যবস্থার পশ্চাৎমুখী হবে
- ঘনমাত্রা বেড়ে যাবে (বিক্রিয়কের)
- উৎপাদ কমে গিয়ে উৎপাদন হ্রাস পাবে
একনজরে সাম্যবস্থানের উপর প্রভাবকের প্রভাব সমূহঃ
![]() |
চিত্রঃ সাম্যবস্থার উপর প্রভাবকের প্রভাব |
পিডিএফ লিংক
SSC Chemistry Ch 7
এই অধ্যায়ের প্রয়োজনীয় আলোচনা এখানেই শেষ হলো। সিলেবাসের বাইরে এর ক্ষেত্র বিশাল।
নোটগুলো বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। এছাড়া আমাকে জানাতে পারেন কোন অধ্যায়ের নোটগুলো খুব বেশি প্রয়োজন।
ধন্যবাদ।
এসএসসি'২২ শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি (10 Minute School)
এসএসসি পরিক্ষা নিয়ে আর নয় টেনশন! বিজ্ঞানের ৫টি বিষয়ের সকল প্রস্তুতিসহ চলে এলো টেন মিনিট স্কুলের এসএসসি’২২ শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি কোর্স!
কোর্সে থাকছেঃ
- ৫ টি বিষয় ( সাধারণ গণিত, উচ্চতর গণিত, জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন )
- ৩৫টি লাইভ ক্লাস
- ৩৫টি লেকচার শিট
নিজেকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখতে এখনই ভর্তি হয়ে যাও শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি কোর্সে এবং সম্পূর্ণ করো তোমার প্রস্তুতি!
আরো পড়ুনঃ